মৃত্যু চিন্তা মানুষকে আল্লাহভীরু ও সৎকর্মশীল বানায় |
মৃত্যু চিন্তা মানুষকে আল্লাহভীরু ও সৎকর্মশীল বানায়|
وَاتَّقُوا يَوْمًا تُرْجَعُونَ فِيهِ إِلَى اللهِ ثُمَّ تُوَفَّى كُلُّ نَفْسٍ مَا كَسَبَتْ وَهُمْ لاَ يُظْلَمُونَ
আল্লাহ বলেন:-
আর তোমরা ঐ দিনকে ভয় কর, যেদিন তোমরা সকলে আল্লাহর নিকটে ফিরে যাবে। অতঃপর সেদিন প্রত্যেকে স্ব স্ব কর্মের ফল পুরোপুরি পাবে এবং তাদের প্রতি কোনরূপ অবিচার করা হবে না’
হযরত ওসমান গণী (রাঃ) কবরস্থানে গিয়ে কাঁদতেন। যাতে দাড়ি ভিজে যেত। তাঁকে বলা হল জান্নাত-জাহান্নামের কথা শুনে আপনি কাঁদেন না, অথচ কবরে এসে কাঁদেন? জবাবে তিনি বলেন, কবর হল আখেরাতের প্রথম মনযিল। যদি কেউ এখানে মুক্তি পায়, তাহলে পরের মনযিলগুলি তার জন্য সহজ হয়ে যায়। আর এখানে মুক্তি না পেলে পরের মনযিলগুলি তার জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। অতঃপর তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন যে, কবরের চাইতে ভীতিকর দৃশ্য আমি আর দেখিনি।
কবর হল নিঃসঙ্গ জগত। সমাজ ও সংসারের পরিবেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে সেখানে একাকী জীবন কাটাতে হবে। বাইরের কেউ সেখানকার অবস্থা জানাবে না বা তিনিও বাইরের কাউকে তার অবস্থা জানাতে পারবেন না। কেউ তার কোন উপকার করতে পারবে না বা তিনিও কারু কোন উপকার বা ক্ষতি করতে পারবেন না। কেননা তিনি থাকবেন দুনিয়ার অন্তরালে।প্রকৃত জ্ঞানী ব্যক্তি যিনি আল্লাহকে চিনেন, তিনি সর্বদা মৃত্যুকে স্মরণ করেন। কেননা মৃত্যু হল প্রধান ফটক। যেটি উন্মোচিত হলেই আখেরাতের সুখ-শান্তির দরজা উন্মুক্ত হয়ে যায়।
আল্লাহর সাক্ষাৎ কামনা করা:
বস্তুতঃ দুনিয়াদাররা দুনিয়া ছাড়তে চায় না। তারা এখানকার ক্ষণস্থায়ী আরাম-আয়েশ থেকে বের হতে চায় না। পক্ষান্তরে ঈমানদারগণ দুনিয়ার চাইতে আখেরাতকে ভালবাসেন। তারা এখানকার কষ্ট-মুছীবতকে হাসিমুখে বরণ করেন আখেরাতে চিরস্থায়ী শান্তি লাভের জন্য। এ কারণেই বলা হয়েছে,
দুনিয়া মুমিনের জন্য কারাগার ও কাফেরের জন্য জান্নাত’। আর তাই মুমিন দ্রুত দুনিয়া ছেড়ে আখেরাতে যেতে চায় তার আল্লাহর সাক্ষাৎ লাভের জন্য।তাই রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, مَنْ كَرِهَ لِقَاءَ اللهِ كَرِهَ اللهُ لِقَاءَهُ ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সাক্ষাতকে অপসন্দ করে, আল্লাহ তার সাক্ষাতকে অপসন্দ করেন’। ফলে আল্লাহ যে কাজ পসন্দ করেন, মুমিন সর্বদা সে কাজেই লিপ্ত থাকে। যে কাজ তিনি পসন্দ করেন না, মুমিন তা কখনই করে না। যদিও শয়তান তাকে সে কাজ করার জন্য বারবার প্রলুব্ধ করে। আল্লাহ বলেন, ...فَمَنْ كَانَ يَرْجُو لِقَاءَ رَبِّهِ فَلْيَعْمَلْ عَمَلًا صَالِحًا وَلاَ يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّهِ أَحَدًا ‘...অতএব যে ব্যক্তি তার প্রভুর সাক্ষাৎ কামনা করে। সে যেন সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং তার পালনকর্তার ইবাদতে কাউকে শরীক না করে’ (কাহফ ১৮/১১০)। অর্থাৎ লোক দেখানো বা শুনানোর জন্য নয়, বরং খালেছ অন্তরে স্রেফ আল্লাহকে রাযী-খুশী করার জন্য ইবাদত করে। নইলে সেটা শিরক হবে। যার পাপ আল্লাহ ক্ষমা করেন না।মুমিন যতদিন দুনিয়ায় থাকে, ততদিন সে তার জান-মাল-সময়-শ্রম সবকিছু ব্যয় করে পরকালীন পাথেয় সঞ্চয়ের জন্য। যেন খুশীমনে তার প্রতিপালকের সামনে নেকীর ডালি নিয়ে হাযির হতে পারে।
পাপ-পঙ্কিলতায় ভরা এ পৃথিবীকে মুমিন তার জন্য পরীক্ষাস্থল মনে করে। আল্লাহ তাকে পরীক্ষার জন্য যতদিন চাইবেন, ততদিন সে এখানে থাকবে সর্বোচ্চ ধৈর্য্যের সাথে, সর্বোচ্চ নেকী সঞ্চয়ের উদ্দেশ্যে। মাঝে-মধ্যে আল্লাহ তার বান্দাকে কঠিন বিপদে ফেলে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরিয়ে আনেন, তাকে সাবধান করার জন্য। যাতে সে আবার পূর্ণোদ্যমে নেকী অর্জনে লিপ্ত হয়। জান্নাতের সর্বোচ্চ ‘তাসনীম’ ঝর্ণা লাভের জন্য সে প্রতিযোগিতা করে। আল্লাহ বলেন, ‘তুমি তাদের চেহারাসমূহে স্বাচ্ছন্দ্যের প্রফুল্লতা দেখতে পাবে’।আল্লাহর প্রিয় বান্দারা সর্বদা আল্লাহর দীদার লাভের জন্য উন্মুখ থাকে। কেননা সেখানে যে পুরস্কার সমূহ লুকিয়ে রয়েছে, তার কোন তুলনা নেই। হাদীছে কুদসীতে আল্লাহ বলেন, أَعْدَدْتُ لِعِبَادِى الصَّالِحِينَ مَا لاَ عَيْنٌ رَأَتْ، وَلاَ أُذُنٌ سَمِعَتْ، وَلاَ خَطَرَ عَلَى قَلْبِ بَشَرٍ. قَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ اقْرَءُوا إِنْ شِئْتُمْ (فَلاَ تَعْلَمُ نَفْسٌ مَا أُخْفِىَ لَهُمْ مِنْ قُرَّةِ أَعْيُنٍ جَزَاءً بِمَا كَانُوا يَعْمَلُونَ) ‘আমি আমার সৎকর্মশীল বান্দাদের জন্য জান্নাতে এমন সুখ-সম্ভার প্রস্ত্তত করে রেখেছি, যা কোন চোখ কখনো দেখেনি, কান কখনো শুনেনি, মানুষের হৃদয় কখনো কল্পনা করেনি’। রাবী আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, এ বিষয়ে তোমরা চাইলে পাঠ কর, ‘কেউ জানেনা তাদের জন্য চক্ষু শীতলকারী কি কি বস্ত্ত লুক্কায়িত রয়েছে তাদের কৃতকর্মের পুরস্কার স্বরূপ’ (সাজদাহ ৩২/১৭)।রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, জান্নাতের একটি চাবুক রাখার স্থান সমস্ত দুনিয়া ও তার মধ্যস্থিত সকল নেয়ামত থেকে উত্তম।
পরকালের পাথেয় সঞ্চয় :
প্রকৃত বুদ্ধিমান সেই যে দুনিয়াকে পরকালের পাথেয় সঞ্চয়ের স্থান হিসাবে গ্রহণ করে। যেদিন তার সাথে কেউ থাকবে না তার আমল ব্যতীত। যা যথাযথভাবে না থাকলে লজ্জিত হতে হবে। ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, জনৈক ব্যক্তি এসে রাসূল (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করল, কোন মুমিন উত্তম? তিনি বললেন, যে সর্বোত্তম চরিত্রবান। লোকটি বলল, কে সর্বাধিক জ্ঞানী? তিনি বললেন,أَكْثَرُهُمْ لِلْمَوْتِ ذِكْرًا وَأَحْسَنُهُمْ لِمَا بَعْدَهُ اسْتِعْدَادًا أُولَئِكَ الأَكْيَاسُ ‘মৃত্যুকে সর্বাধিক স্মরণকারী এবং তার পরবর্তী জীবনের জন্য সর্বাঙ্গীন সুন্দর প্রস্তুতি গ্রহণকারী। তারাই হল প্রকৃত জ্ঞানী’।এর কারণ এই যে, মৃত্যু পরবর্তী অদৃশ্য জীবন সম্পর্কে তিনিই ছিলেন সর্বাধিক জ্ঞানী এবং মানব জগতের মধ্যে তিনিই হলেন একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী। যা মিরাজের রাত্রিতে আল্লাহ তাকে দেখিয়েছেন।
আনাস (রাঃ) বলেন, একদিন ছালাত শেষে রাসূল (ছাঃ) আমাদের দিকে ফিরে বললেন, ‘হে লোক সকল! আমি তোমাদের ইমাম। অতএব রুকূ, সিজদা, ক্বিয়াম ও সালাম ফিরানোর ব্যাপারে তোমরা আমার আগে বেড়ো না। কারণ আমি আমার সম্মুখে ও পিছনে দেখতে পাই। যার হাতে আমার জীবন, তার কসম করে বলছি, যদি তোমরা দেখতে যা আমি দেখেছি, তাহ’লে অবশ্যই তোমরা হাসতে কম ও কাঁদতে বেশী। লোকেরা বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি দেখেছেন? তিনি বললেন, জান্নাত ও জাহান্নাম’।অতএব জাহান্নামের ভয় ও জান্নাতের প্রবল আকাংখা নিয়েই সৎকর্ম করতে হবে।
সৎকর্মের উপর মৃত্যুবরণ :
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, إِنَّمَا الأَعْمَالُ بِالْخَوَاتِيمِ ‘শেষ আমলের উপরেই পরিণাম নির্ধারিত হয়’।অতএব শেষ আমল যদি সুন্দর হয়, তবে সেটি হবে দুনিয়া থেকে সুন্দর বিদায়ের (حُسْنُ الْخَاتِمَة) লক্ষণ। আল্লাহর পথে জিহাদ করা যা সর্বোচ্চ আমল, আল্লাহর পথে দাওয়াত দেওয়া, দ্বীন শেখা ও শেখানো এগুলি নবীদের কাজ। আল্লাহ বলেন, ‘যদি তোমরা আল্লাহর রাস্তায় নিহত হও বা মৃত্যুবরণ কর, তবে (মনে রেখ) তারা যা কিছু (দুনিয়ায়) সঞ্চয় করেছে, সবকিছুর চাইতে আল্লাহর ক্ষমা ও করুণা অবশ্যই উত্তম’ (আলে ইমরান ৩/১৫৭)। অর্থাৎ আল্লাহর পথে যদি কেউ নিহত হয় বা মৃত্যুবরণ করে, সেটি হবে তার সুন্দর বিদায়ের নিদর্শন। অনুরূপভাবে আল্লাহর পথে হিজরত করা, দাওয়াতে বের হওয়া, হজ্জ বা ওমরায় গমন করা, আল্লাহর পথে কষ্ট ভোগ করা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করা হল সর্বোত্তম মৃত্যু সমূহের অন্তর্ভুক্ত। এতে আল্লাহর নিকট মহা পুরস্কার নিহিত রয়েছে।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলে ও তার উপরেই জীবন শেষ হয়, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ছিয়াম রাখে ও তার উপরেই জীবন শেষ হয়, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ছাদাক্বা করে ও তার উপরেই জীবন শেষ হয়, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।এতে প্রমাণিত হয় যে, নেক আমলের উপর মৃত্যুবরণ করা আখেরাতে মুক্তির শুভ লক্ষণ। অতএব সর্বদা নেক আমলের মধ্যেই জীবন অতিবাহিত করা উচিত। কেননা মৃত্যু যেকোন সময় এসে যেতে পারে। আর সর্বদা মৃত্যুকে স্মরণ করা আত্মশুদ্ধির সবচেয়ে বড় উপায়।
মৃত্যুর চিন্তা আল্লাহভীরুতা আনয়ন করে ও ঈমান বৃদ্ধি করে :
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মুমিনদের জানাযায় অংশগ্রহণ করতে বলেছেন এবং তাতে এক ক্বীরাত্ব তথা ওহোদ পাহাড়ের সম পরিমাণ নেকী ও দাফন শেষ করে ফিরে এলে তাতে দুই ক্বীরাত্ব সম পরিমাণ নেকীর কথা বলেছেন।যাতে অন্যের জানাযা দেখে নিজের জানাযার কথা স্মরণ হয়। অন্যের কবরে শোয়ানো দেখে নিজের কবরের কথা মনে হয়। অন্যের অসহায় চেহারা দেখে নিজের মৃত্যুকালীন অসহায় অবস্থার কথা স্মরণ হয়। যাতে মানুষের অহংকার চুর্ণ হয় ও সে বিনয়ী হয়। অতঃপর পরপারে যাত্রার প্রস্ত্ততি গ্রহণে তৎপর হয়। তিনি কবরপূজার শিরকের কথা চিন্তা করে প্রথমে কবর যিয়ারত নিষিদ্ধ করেছিলেন। কিন্তু পরে অনুমতি দিয়ে বলেন, نَهَيْتُكُمْ عَنْ زِيَارَةِ الْقُبُورِ فَزُورُوهَا ‘আমি তোমাদেরকে কবর
যিয়ারত থেকে নিষেধ করেছিলাম। কিন্তু এখন তোমরা যিয়ারত কর’। فَإِنَّهَا تُذَكِّرُ الْمَوْتَ ‘কেননা এটি তোমাদের মৃত্যুর কথা স্মরণ করিয়ে দেবে’।আনাস (রাঃ) বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) কতগুলি দাগ কাটলেন। অতঃপর বললেন, هَذَا الأَمَلُ وَهَذَا أَجَلُهُ، فَبَيْنَمَا هُوَ كَذَلِكَ إِذْ جَاءَهُ الْخَطُّ الأَقْرَبُ ‘এটি মানুষের আকাংখা ও এটি তার মৃত্যু। এর মধ্যেই মানুষ চলতে থাকে। এক সময় সে তার মৃত্যুর দাগের নিকটে এসে যায়’।ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমার কাঁধ ধরে বললেন, كُنْ فِى الدُّنْيَا كَأَنَّكَ غَرِيبٌ، أَوْ عَابِرُ سَبِيلٍ ‘তুমি দুনিয়াতে বসবাস কর যেন তুমি একজন আগন্তুক বা একজন মুসাফির’। ইবনু ওমর (রাঃ) বলতেন, সন্ধ্যা এলে তুমি সকালের অপেক্ষা করো না। সকাল এলে তুমি সন্ধ্যার অপেক্ষা করো না। তুমি তোমার অসুখের পূর্বে সুস্থতাকে এবং মৃত্যু আসার পূর্বে জীবনকে কাজে লাগাও’।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) জুম‘আর খুৎবাতে অধিকাংশ সময় সূরা ক্বাফ থেকে পাঠ করে শুনাতেন। কেননা সেখানে রয়েছে মৃত্যু ও আখেরাতের বাস্তব বাণীচিত্র সমূহ। বিশেষ করে ২-৩, ১৬-৩০ পর্যন্ত আয়াতগুলি। তন্মধ্যে ২২-২৫ চারটি আয়াতে বলা হয়েছে, ‘তুমি এই দিবস সম্পর্কে উদাসীন ছিলে। এখন তোমার সম্মুখ হতে পর্দা সরিয়ে দিয়েছি। অতএব আজ তোমার দৃষ্টি প্রখর‘তার সঙ্গী ফেরেশতা বলবে, এই তো আমার নিকট তার আমলনামা প্রস্ত্তত’। ‘(তখন আদেশ করা হবে) তোমরা উভয়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ কর প্রত্যেক উদ্ধত অবিশ্বাসীকে‘কল্যাণ কর্মে বাধাদানকারী, সীমালংঘনকারী ও সন্দেহ পোষণকারীকে’ (ক্বাফ ৫০/২২-২৫)।
নেককার ও বদকার প্রত্যেকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে এবং প্রত্যেকেই কাফন পরে কবরে যাবে। কিন্তু সেখানে গিয়ে কেউ আগুনের খোরাক হবে এবং কেউ জান্নাতের সুবাতাস পেয়ে ধন্য হবে। কেউ পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত ভয়ংকর ফেরেশতার প্রচন্ড হাতুড়ি পেটা খাবে, কেউ জান্নাতের সুগন্ধিতে নববিবাহিতের ন্যায় সুখনিন্দ্রায় ঘুমিয়ে যাবে। কারু কবর সংকীর্ণ হবে ও দুই পার্শ্ব চেপে ধরে তাকে পিষ্ট করবে। কারু কবর প্রশস্ত ও আলোকিত হবে। নিদ্রার মধ্যে দুঃস্বপ্নে মানুষ ভয়ে চিৎকার দিয়ে ওঠে বা আনন্দে হেসে ওঠে। এটা যেমন সবাই বাস্তব বলে মেনে নিচ্ছে। তাহ’লে চিরনিদ্রার জগতে এটা অসম্ভব হবে কেন? অতএব বুদ্ধিমান মানুষের সাবধান হওয়া উচিত।
ক্বিয়ামত দিবসে মানুষের অবস্থা :
আল্লাহ বলেন, সেদিন তোমাদেরকে উপস্থিত করা হবে। কোন কিছুই তোমাদের গোপন থাকবে না’। ‘অতঃপর যার আমলনামা তার ডান হাতে দেওয়া হবে, সে বলবে, এসো তোমরা আমার আমলনামা পড়ে দেখ! আমি নিশ্চিত জানতাম যে, আমাকে জবাবদিহিতার সম্মুখীন হতে হবে। অতঃপর সে সুখী জীবন যাপন করবে। সুউচ্চ জান্নাতে যার ফলসমূহ নীচু হয়ে নিকটে আসবে। বলা হবে তোমরা খুশীমনে খাও ও পান কর বিগত দিনে (দুনিয়াতে) যেসব সৎকর্ম করেছিলে তার প্রতিদানে। অতঃপর যার আমলনামা তার বাম হাতে দেওয়া হবে, সে বলবে, হায়! যদি আমাকে এ আমলনামা না দেওয়া হত! এবং আমি যদি আমার হিসাব না জানতাম! হায়, মৃত্যুই যদি আমার চূড়ান্ত পরিণতি হত! আমার ধন-সম্পদ আমার কোন কাজে আসল না।আমার রাজনৈতিক ক্ষমতা বরবাদ হয়ে গেল’। ‘(তখন ফেরেশতাদের বলা হবে) ধরো একে। অতঃপর বেড়ী পরাও একে’। ‘অতঃপর জাহান্নামে নিক্ষেপ কর একে’। ‘অতঃপর সত্তুর হাত লম্বা শিকল দিয়ে শক্তভাবে বাঁধো একে। ‘সে মহান আল্লাহতে বিশ্বাসী ছিল না’। ‘সে অভাবগ্রস্তকে খাদ্য দানে উৎসাহ প্রদান করত না’। অতএব আজকে এখানে তার কোন বন্ধু নেই। ‘আর তার জন্য কোন খাদ্য নেই দেহ নিঃসৃত পূঁজ-রক্ত ব্যতীত’। যা কেউ খাবে না পাপীরা ব্যতীত’ (হা-ক্কাহ ৬৯/১৮-৩৭)। অতএব আসুন! আমরা মৃত্যুর আগেই সাবধান হই। আল্লাহ আমাদেরকে তাঁর জান্নাতী বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করুন- আমীন!
মৃত্যুর আগে ৭ টি কাজের প্রস্তুতি নেওয়া:
১. ঈমানকে বিশুদ্ধ করা।
২. নেক আমল দিয়ে জীবনকে সাজানো।
৩. তওবা করতে থাকা।
৪. বেশি বেশি মৃত্যুর স্মরণ করা।
৫. ওসিয়ত লিখে রাখা।
৬. ঈমানের ওপর অটল থাকার দোয়া করা।
৭. তিনটি কাজ বেশি বেশি করা।- ১)উপকারী ইলম রেখে যাওয়া। ২) সদকায়ে জারিয়ে রেখে যাওয়া। ৩) নেক সন্তান রেখে যাওয়া। (সহিহ মুসলিম : ৪৩১০)
এছাড়াও মৃত ব্যক্তির আত্মীয়-স্বজনদের উচিত মৃতের জন্য দান-সদকা, হজ, ওমরা ও কোরবানী করে তার রুহের এর সওয়াব পৌঁছিয়ে দেওয়া।
আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ভালো ও পুণ্যের কাজ খারাপ মৃত্যু থেকে বাঁচিয়ে রাখে, গোপনে দান আল্লাহর ক্রোধ ঠাণ্ডা করে এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক বয়স বৃদ্ধি করে। (তাবরানি কাবির, হাদিস : ৮০১৪)
বেশি বেশি মৃত্যুর কথা স্মরণের অনেক উপকারিতা রয়েছে। তন্মধ্যে সবচে বড় উপকারিতা হলো- মৃত্যুর স্মরণ মানুষকে মৃত্যুর পূর্বেই পরকালের প্রস্তুতি গ্রহণে সাহায্য করে। মৃত্যুর স্মরণের উপকারিতা সম্পর্কে আল্লামা দাক্কাক রহ: বলেন,যে ব্যক্তি বেশি বেশি মৃত্যুকে স্মরণ করে তাকে তিনটি পুরস্কারে ভূষিত করা হয়-
১। ভুলবশত গোনাহ হয়ে গেলে তাড়াতাড়ি তাওবা করার তাওফীক নসীব হয়।
২। অল্পে তুষ্টতার নেয়ামত প্রাপ্ত হয়।
৩। ইবাদতে স্বাদ সৃষ্টি হয়।’
‘যে ব্যক্তি মৃত্যুকে ভুলে থাকে তাকে তিনটি বিষয়ে শাস্তি দেয়া হয়-
১। তার তাওবা করা নসীব হয় না।
২। অল্পে তুষ্টতার নেয়ামত থেকে বঞ্চিত হয়।
৩। ইবাদত বন্দেগীতে আলস্য ভাব চলে আসে।
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে বেশি বেশি মৃত্যুর কথা স্মরণ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
পবিত্র কোরআনে সূরা মুনাফিকুন - এর ১০ ও ১১ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন, ’মুমিনগণ! তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি যেন তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফেল না করে। যারা এ কারণে গাফেল হয়, তারাই তো ক্ষতিগ্রস্ত। আমি তোমাদেরকে যা দিয়েছি তা থেকে মৃত্যু আসার আগেই ব্যয় কর। অন্যথায় (মৃত্যু আসলে) সে বলবে: হে আমার পালনকর্তা, আমাকে আরো কিছুকাল অবকাশ দিলেন না কেন? তাহলে আমি সদকা করতাম এবং সৎকর্মীদের অন্তর্ভূক্ত হতাম। প্রত্যেক ব্যক্তির যখন নির্ধারিত সময় উপস্থিত হবে তখন আল্লাহ কাউকে অবকাশ দেবেন না। তোমরা যা কর, আল্লাহ সে বিষয়ে খবর রাখেন’।
Comments
Post a Comment